top of page

সৌদি আরবের লোকাল কালচার কেমন

Writer's picture: Marketing ProbashiMarketing Probashi



কোনো দেশে যাওয়ার আগে সে দেশের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা, জনসাধারণের জীবনধারা,পোশাক আশাক,খাদ্যাভাস ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে গেলে সে দেশে গিয়ে খাপ খাওয়ানো সহজ হয়।


যারা সৌদি আরবে যেতে চাচ্ছেন তাঁদের কথা মাথায় রেখে আমাদের আজকের লেখা। আজকের লেখাটি পড়ে আপনারা সৌদি আরবের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা,সে দেশের জনসাধারণের পোশাক,জীবনধারা,খাদ্যাভাস প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করতে পারবেন।


রাজনৈতিক অবস্থা :


সৌদি আরব রাজতান্ত্রিক দেশ। সৌদি আরবের রাজার সরকারী উপাধি "দুটি পবিত্র মসজিদের রক্ষক (খাদেমুল হারমাইন আশ-শারিফাইন) যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন কিংবা জাতীয় নির্বাচন এদেশে নিষিদ্ধ। ১৯৯২ সালে রাজকীয় ফরমান জারির মাধ্যমে গৃহীত মৌলিক আইন অনুযায়ী রাজাকে অবশ্যই ইসলামি আইন এবং কুরআন মেনে শাসন করতে হবে। এই আইনে কুরআন এবং সুন্নাহকে সৌদি আরবের সংবিধান হিসাবে গৃহীত হয়। অমুসলিমদের দ্বারা অমুসলিম ধর্মীয় উপকরণ (যেমন বাইবেল ) বিতরণ সৌদি আরবে অমুসলিমদের দ্বারা ধর্ম প্রচার করা অবৈধ।


অর্থনৈতিক অবস্থা :


জিএনপি অনুসারে সৌদি আরব বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশের একটি। সৌদি আরবের মূল অর্থনীতি পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক। সৌদি আরবে সমগ্র বিশ্বের ভূ-ভাগের ২০% খনিজ তেলের মজুদ রয়েছে।পরিমাণে এটা ২৬ হাজার কোটি ব্যারেল। বাজেটে রাজস্ব মোটামুটি ৭৫% এবং রপ্তানি আয়ের ৯০% তেল শিল্প থেকে আসে। তেল ছাড়াও গ্যাস ও স্বর্ণ খনি সৌদি আরবের অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করে। সৌদি আরব ছয়টি অর্থনৈতিক শহর তৈরী করেছে।


ধর্মীয় অবস্থা:


ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় পরিচালিত সৌদি আরবের নাগরিকত্ব লাভের প্রধান শর্ত ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়া। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার ৩০% এরও বেশি বিদেশি শ্রমিক নিয়ে গঠিত, যারা পুরোপুরি মুসলিম নয়। এদের প্রায় এক মিলিয়ন খ্রিস্টান পাশাপাশি হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও রয়েছেন। কিন্তু এদেশে কোনও গীর্জা, মন্দির বা অন্যান্য অমুসলিম উপাসনালয় স্থাপন এবং ইসলাম ব্যতিত অন্য ধর্মীয় আচার পালনের অনুমতি নেই। বাইবেল,গীতা, ত্রিপিটকের মতো অমুসলিম ধর্মীয় উপকরণ বিতরণ সহ অমুসলিমদের দ্বারা মুসলমানদের ধর্মান্তরিত করা অবৈধ এবং পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় অমুসলিমদের প্রবেশাধিকার নেই। এদেশে ইসলাম থেকে অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া ধর্মত্যাগকারী হিসাবে মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত অপরাধ।


জীবনধারা:


সৌদি নাগরিকরা বিলাসবহুল জীবন যাপনে অভ্যস্ত। এদেশে শিক্ষার হার প্রায় ৮০.৫ শতাংশ। সৌদি নাগরিকরা ইসলামী জীবনযাপনে অভ্যস্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি সরকার পর্যটন ও বিনোদন খাতকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে জেদ্দা, রিয়াদ, জাজান, ইয়ানবু, আবহা, তায়েফ ও অন্যান্য শহরে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পপ সঙ্গীত, গীতিনৃত্য ও কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। এমন আয়োজনের আরো পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশের তরুণ-তরুণীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। দুবাই, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মিলান, ন্যাপলস, ভেনিস ও প্যারিসের মতো সৌদি আরবকে গড়ে তুলতে চায় রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ।


২০১৮ সালে সৌদি আরব সিনেমার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পরপরই নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণ, প্রদর্শন, প্রযোজনার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এরই মধ্যে হলিউডি স্বপ্নের এ শিল্পে দেশটি ৬৪ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। পুরো দেশে ৩০০টি প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে পবিত্র মদিনায় নির্মিত হবে ১০টি।


পোশাক: সৌদি নারীরা আবায়া, বোরকা, হিজাবসহ অন্যান্য ইসলামী শরিয়া সমর্থিত পোশাক পরেন। পুরুষেরা আলখাল্লা, জুব্বা, গুত্রা (মাথায় পরার আরব্য পোশাক) এবং টুপি পরিধান করেন। পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়া মেনে চলা হয়।


২০১৭ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে সৌদি আরবে নারীর ক্ষমতায়ন ও তাদের কর্মশক্তি কাজে লাগানোর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। একা একা নারীদের ভ্রমণ, অবস্থান, নারীদের গাড়ি চালানো, রেস্তোরাঁগুলোতে নারী-পুরুষ একসাথে বসে পানাহার, বাইরে বের হলে বোরকা বা হিজাব পড়ার বাধ্যতামূলক বিধান রহিতকরণ, বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড, মিউজিক কনসার্টে নারীদের অংশগ্রহণ, বিভিন্ন শপিংমলে নারী সেলসগার্ল নিয়োগ, পবিত্র কাবাগৃহ ও মদিনার মসজিদ চত্বরে ইউনিফর্ম পরা নারী পুলিশের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন লক্ষ করা যায়।


খাদ্যাভাস:


খাদ্যাভাসের জনপ্রিয়তা আরবের সংস্কৃতিকে প্রভাবশালী করে তুলেছে। মুসলিম প্রধান অঞ্চল হওয়ায় সৌদি আরবের প্রতিটি খাবারই ১০০% হালাল। সকালের নাশতায় তাদের প্রিয় খাদ্য জয়তুন ও পনির আর থাকে হালওয়া। জয়তুন আকারে আমাদের দেশি জলপাইয়ের অর্ধেক এবং কালো রঙের। বিভিন্ন স্বাদ আর রঙের জলপাই পাওয়া যায় এখানে।


সৌদি আরবের মিষ্টি খাবারগুলোর মধ্যে আছে বাসবোসা, বাখলাভা, কুনাফা, মায়ামোল, হালওয়া, বামিয়েহ, মুহালবিয়া ও কাতায়েফ।


এছাড়া মান্দি,খ্যাবসা,আল ফাহাম,রুজ বুখারি,মুত্বব্বাক,খবুজ,তামিয়া,গাওয়া সেলেক,মাকলুবা প্রভৃতি ভাত ও মাংসের সমন্বয়ে প্রস্তুতকৃত খাদ্য সৌদি আরবের প্রসিদ্ধ খাদ্য। বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধনী রাজ্য সৌদি আরব যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ তেমনি এদেশের জীবনধারায় ও বৈচিত্র‍্য বিদ্যমান। সৃষ্টিকর্তা যেনো দুহাত ভরে এদেশকে সমৃদ্ধি দান করেছেন।



7 views
bottom of page